

বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস থেকে গণমাধ্যমে আবহাওয়ার যে খবরাখবর পৌঁছে দিচ্ছে তাই আমরা শুনে থাকি। ঝড়-বৃষ্টি বন্যা সবগুলোই প্রাকৃতিক বিষয়। এবারে প্রতিবছরের মতো একটি ঝড় আমাদের দেশের উপরে আঘাত হানবে এবং মায়ানমারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই ঝড়ে। এই ঝড় হলে আমাদের মত ছোট দেশের যেটা সমস্যা হয় সেটি হলো ঝড়ের নাম শুনলেই তাদের কাছে মনে হয় এটি হল একটি অভিশাপ। কারণ যে ব্যক্তি প্রতিদিন যা ইনকাম করে তা থেকে সন্ধ্যা হলে কয়টা চাল কিনে বাড়ি ফেরে রান্না করে পরিবার পরিজনকে নিয়ে কোন ভাবে বেঁচে আছে।তাদের কাছে ঝড় হয়েছে অভিশাপ আমার দৃষ্টিতে। এবং আমাদের বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ।কৃষি খাতের একটি প্রধান উপখাত হিসেবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে। যারা ফসল ফলায় পরের কাছ থেকে অর্থ এনে। যখনি তাদের ফসল কাটবে তখনই এ ধরনের ঝড়ের উৎপাত দেখা দেয়। তারা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিজের অর্জিত অর্থ না থাকায় অন্যের অর্থে ফসল ফলানো তাও ধ্বংস হয় তাই প্রত্যেক কৃষি পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। নিজে অর্থের মুখ দেখতে পায় না এবং যারা উপকূলে বাস করেন তাদের কাচা ঘরবাড়ি একমাত্র সম্বল।মাছ চাষ ছোট ছোট পুকুর,ডোবায় অনাবাদি জমি না রেখে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী তারা অনেক স্বপ্ন নিয়ে মাছ চাষ করে থাকেন।তাদের মাছ যখন জলোচ্ছ্বাস হলে ভেসে যায়। তারা নিঃস্ব হয়ে যায়। ঝড় হল সেই সব মানুষের কাছে অভিশাপ। আমার জানামতে মাছ চাষ বড় পরিসরে
করে থাকেন অনেক শিল্পপতি ।স্বস্ব সহ বিঘা জমি নিয়ে চাষ করেন তাদের ও ক্ষতি হয়। কিন্তু তারা এই ক্ষতি কাটিয়ে উড়তে পারে। স্বপ্ন ভাঙে ছোট ছোট পরিবারের।পূর্বে বেশ কিছু ঝড় বাংলাদেশে আঘাত এনেছে তা হলো আয়লা,সিডর, মহাসেন ,ফনি, বুলবুল, সিত্রাং এ বছর যে ঝড় ১৪ মে প্রভাব ফেলতে পারে তার নামটি নিয়ে সবাই চিন্তিত। আসুন সেই নামের সম্পর্কে একটু জানি।
★“ঘূর্ণিঝড় মোখা” নাম হল কেন এ বিষয়ে একটু জানি।ইয়েমেনের শহর মোকা থেকে এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়েছে। ৫০০বছর আগে এই শহর সারা বিশ্বদরবারে কফির পরিচয় করানোর জন্য বিখ্যাত হয়েছিল। ওয়ার্ল্ড মেটোরোলজিক্যাল অর্গ্যানাইজ়েশন বা WMO এই ঘূর্ণিঝড়গুলির নামকরণ করে।এর ইংরেজিতে ” Mocha” এর বাংলা হলো”মোচা” কিন্তু ভারত বলছে “মোকা” বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া সব থেকে বলেন মোখা”আমরা যে যেটা বলিনা কেন শুধুমাত্র মনে রাখবেন ঝড় একটি ভয়ংকর বিষয়। এটা নিয়ে তর্কবিতর্ক না করে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন। প্রাণীকুলের মানুষদের যেন কোন ক্ষতি না হয়। আবহাওয়া অফিসের ঘোষণা মতে রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’র প্রভাবে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম এবং উপকূলীয় দ্বীপ ও চরগুলোতে ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। উপকূলের ১০ জেলায় পাঁচ থেকে সাত ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। যেসব স্থানে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। এছাড়া পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৮নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আসুন আমরা সবাই স্রষ্টার কাছে যার যার ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা করি। এই ঝড় যেন আমাদের সমুদ্র বন্দর থেকে গতিবেগ কমিয়ে মানব প্রাণীকুলের উপরে প্রভাবটা না পড়ে। আমি চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস একজন ছবি প্রেমী মানুষ। জন্মস্থান বরিশাল ঝালকাঠি। ১৯৯৯ সালে বাড়ি থেকে খুলনাতে পালিয়ে আসি শিল্পী হওয়ার উদ্দেশ্যে। সেই থেকে খুলনা শহরে ভালো-মন্দ বুঝতে শিখেছি। সুন্দরবন আমি বহুবার গেয়েছি এই বন সম্পর্কে আপনি আমি সবাই অবগত।এই বনের জন্য আমাদের ক্ষতির পরিমাণটা খুবই কম হয়। আমাদের খুলনা,সাতক্ষীরা, মংলা,বাগেরহাট এসব অঞ্চলের মানুষদের জন্য সুন্দরবনকে অভিভাবক বলতে পারি। এই বন আমাদের বিপদ থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে।আমি ছবি আঁকার পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘটে যাওয়ার বিষয় নিয়ে একটু গবেষণা করার চিন্তা করি এবং গান কবিতার রূপ দেওয়ার চেষ্টা করি। আমার একটি গানের চ্যানেল আছে আমার চ্যানেলে আপনি ভিজিট করলে জানতে পারবেন প্রত্যেকটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে লেখা আছে গান, কবিতা। এবারেও মোকা ঝড় কে নিয়ে হঠাৎ করে লেখা।সেই গানটি অত্যন্ত গুনী মানুষ যার সান্নিধ্য পেয়ে আমার লেখার প্রতি গতিবেগ বৃদ্ধি পেয়েছে করোনা থেকে। তিনি খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছেন তবুও আমার প্রত্যেকটি লেখা সুর দিয়ে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। তার একটি হারমোনিয়াম পর্যন্ত নেই ।অন্যের বাড়িতে গিয়ে গান গেয়ে আমাকে পাঠায়।এই ধরনের গান শুধুমাত্র গান বললে ভুল হবে ।এই ধরনের গান গণমাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার একটি মেসেজ।আসলে আমরা প্রত্যেক শিল্পীরাই তাদের যথার্থ শিল্প সাধনা করার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় থাকে না। কারণ তারা খুব চিন্তা ভাবনা নিয়ে সময়কে অতিবাহিত করে। অর্থের প্রতি তেমন কোন আগ্রহ প্রকাশ করে না তারা। তাই একটু অন্যদের চেয়ে অভাবী হয়ে থাকে। আমি নিজেও একজন অভাবী মানুষ। যাই হোক আপনারা গান শুনলে আমার চ্যানেলের নাম (Artist Milon Biswas-আর্টিস্ট মিলন বিশ্বাস )
★এই দুর্যোগে আমাদের উপকূলে মানুষদের কি করনীয়
১) প্রথমে আবহাওয়ার খবরাখবর প্রতিনিয়ত শুনতে হবে।
২) যাদের কাঁচা ঘরবাড়ি রয়েছেন তারা দ্রুত আশ্রয় কেন্দ্রে যাবেন।
৩) বৃদ্ধ মা-বাবা দাদা-দাদী তাদেরকে দ্রুত আশ্রয় কেন্দ্রে নিবেন।
৪) গর্ভধারিনী মাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাবেন।
৫)শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে নিবেন।
৬)গবাদি পশু পাখি নিরাপদ স্থানে নিবেন।
মনে রাখবেন আপনি ঝড়ে যা কিছু হারাবেন, বেঁচে থাকলে আবারও সংরক্ষণ করতে পারবেন তাই অবহেলা করবেন না।
★আমাদের মৎস্যচাষীদের উদ্দেশ্যে আমি বলবো
১) আপনারা মাছ চাষের পুকুর বা ঘেরের দূর্বল পাড় মেরামত করুন।
২)মজবুত করে ফেন্সিং বা নেট স্থাপন করুন।
৩)ক্ষতি এড়াতে অপরিকল্পিত ঘেরে পিএল মজুদ বন্ধ রাখুন।
৪)মাছ বা চিংড়ির জন্য কিছু খাদ্য মজুদ রাখুন।
৫)বিক্রয়যোগ্য মাছ বা চিংড়ি ধরে ফেলুন।
মৎস্যজীবীদের দুর্দিনে পাশে থাকেন ফিশফার্ম ওনার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ফোয়াব) এর সভাপতি মোল্লা সামছুর রহমান শাহীন,ভাই মৎস্যজীবীদের ভালবাসেন তাদের সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে পথ চলেন সবসময়।আমিও সকল মৎস্যজীবীদের জন্য মঙ্গল কামনা করি তাদের স্বপ্ন যেন চোখের সামনেই ধ্বংস না হয়।আমাদের সমাজে যারা বিত্তবান আছেন তারা বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত বন্যার্থীদের পাশে দাঁড়াবেন এমনটা প্রত্যাশা করি।
যে যেখানে আছেন সকল প্রাণীকুলের সবার জন্য সুস্থতা কামনা করি। আমার লেখার মাঝে যদি কোন ভুল থাকে ভুল শুধরে পড়বেন। এবং আমার জন্য শুভ কামনা করবেন
আমি যেন আমার কর্মের মাঝে মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকতে পারি।
লেখক পরিচিতি চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক খুলনা আর্ট একাডেমি।
আপনার মতামত লিখুন :